রেষ্টুরেন্ট ব্যবসায় নতুন সংযোজন: ক্লাউড কিচেন

সময়ের সাথে সাথে রেষ্টুরেন্ট ব্যবসায় এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। আমরা এখন ঘরে বসেই অর্ডার করে দিতে পারছি আমাদের পছন্দের খাবারটি বিভিন্ন অ্যাপের সাহায্যে। এখন অনেক রেষ্টুরেন্ট আছে যেখানে শুধু আছে রান্নাঘর এবং ষ্টোররুম। বসে খাওয়ার মত বেবস্থা এসব রেষ্টুরেন্ট এ করা হয় না। আবার প্রধান রাঁধুনি এবং তার সহযোগী ছাড়া রাখা হয় না অতিরিক্ত কোন স্টাফ। এসব রেস্টুরেন্ট মুলত অ্যাপের মাধ্যমে খাবারের অর্ডার গ্রহন করে থাকে এবং থার্ড পার্টি অথবা এদের নিজস্ব ডেলিভারি বেবস্থার মাধ্যমে অর্ডার করা খাবার সরবরাহ করে থাকে গ্রাহকের কাছে। সম্প্রতি সময়ে আমরা “ ক্লাউড কিচেন” শব্দটি অনেক বেশি শুনছি। উপরে আলোচিত রেস্টুরেন্ট এর ধরনেকেই বলা হয়ে থাকে “ ক্লাউড কিচেন”।

সহজ ভাবে যদি বলতে যাই “ ক্লাউড কিচেন” হল এমন এক রেষ্টুরেন্ট মডেল যেখানে খাবার এর অর্ডার গ্রহন করা হয় অনলাইনে (অ্যাপ অথবা অন্য কোন উপায়ে) এবং যেখানে বসে খাওয়ার মত বেবস্থা রাখা হয় না। আপনি যে রান্নাঘরে আপনার পরিবারের জন্য রান্না সেটিও হয়ে যেতে পারে আপনার আয়ের একটি উৎস। আপনার ধারেকাছের মানুষজন “ ক্লাউড কিচেন” এর কল্যাণে অর্ডার করতে পারে আপনার হাতের সুস্বাদু খাবার।

অনেকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে “ ক্লাউড কিচেন” এর সুবিধাগুলো কি কি ? সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে আপনার ব্যাবসায়িক খরচ অনেকখানি কমে আসবে কেননা প্রধান রাঁধুনি এবং তার সহযোগী ছাড়া আপনার আর কোন অতিরিক্ত স্টাফ নিতে হচ্ছে না। আবার অনেকে সময় চাইলে নিজের রান্না ঘরেও শুরু করে দিতে পারেন “ ক্লাউড কিচেন” (লাইসেন্স বিষয়ক কিছু জটিলতা থাকে)। তাই এক কথায় বলা যায় অনেক সল্প পুঁজিতে চাইলে যে কেও শুরু করে দিতে পারে “ ক্লাউড কিচেন”। ক্লাউড কিচেনে আরো একটি বড় সুবিধা হচ্ছে, সম্পূর্ণ রেস্টুরেন্ট সাজানো এবং রক্ষণাবেক্ষণের খরচ থেকে বেঁচে যাওয়া। তাই যারা ভাবছেন “ ক্লাউড কিচেন” শুরু করবেন তারা এখনি নেমে পরতে পারেন। নিচের বিষয়গুলো আমরা “ ক্লাউড কিচেন” শুরু করার পূর্বে বিবেচনায় রাখতে পারি।

যেহেতু “ ক্লাউড কিচেন” এক প্রকার রেস্টুরেন্ট ব্যবসা সেহেতু আপনাকে কয়েক রকমের লাইসেন্স নেয়া লাগতে পারে। যেমন ট্রেড লাইসেন্স, পরিবেশ ছাড়পত্র, স্যানিটারি লাইসেন্স, ফায়ার লাইসেন্স, কৃষি উপকরণ সনদ, বিএসটিআই সনদ ইত্যাদি। কি ধরনের খাবারের অর্ডার গ্রহণ করবেন এটাও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সিদ্ধান্ত আপানার কি ধরনের খাবার আপনি প্রস্তুত করবেন। সেটি হতে পারে বাংলা খাবার (দুপুরের অথবা রাতের), চাইনিজ সেট মেনু, ইতালিয়ান ফুড ইত্যাদি।

“ ক্লাউড কিচেন” এর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে আপানর রান্নাঘর এর স্থান। এরকম স্থান বেছে নিন যেটি আপনার টার্গেট এরিয়ার কাছাকাছি হয় যেন খুব সহজে আপানর অর্ডার করা খাবার সরবরাহ করতে পারেন গ্রাহক এর কাছে।

“ ক্লাউড কিচেন” এ যেহেতু অনলাইন এর মাধ্যমে খাবার অর্ডার গ্রহন করা হয় সেহেতু কোন অ্যাপের মাধ্যমে গ্রহন করবেন সেটি একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আপনি ফুডপাণ্ডা অথবা নিজের তৈরি অ্যাপ অথবা ফেসবুক পেজ এর মাধ্যমেও অর্ডার গ্রহণ করতে পারেন। তবে আমার বাক্তিগত অভিমত হচ্ছে শুরুর দিকে ফুডপাণ্ডা, পাঠাও, এদের উপর নির্ভর করাই ভালো। এক্ষেত্রে অবশ্য এদেরকে কিছু কমিশন আপনাকে দিতে হবে।

আপনার “ ক্লাউড কিচেন” এর ব্যবসা লাভজনক হবে কিনা সেটি অনেকাংশে নির্ভর করে আপানর নিবাচিত শেফ এর উপর। অবশ্যই এক্ষেত্রে একজন অভিজ্ঞ শেফ আপনাকে নির্বাচন করতে হবে। সাথে সাথে শেফ এর একজন সহযোগীও আপনাকে নিতে হবে যে কিনা প্রধান শেফকে সাহায্য করতে পারবে।

প্রাপ্ত অর্ডার সমুহ সময়মত গ্রাহকের কাছে প্রেরন করা অত্তাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একজন এর অর্ডার আরেকজনের কাছে ভুলক্রমে কোনভাবেই প্রেরন করা যাবে না। বেশি অর্ডার এর হিসাব সামলানোর ঝামেলা এড়িয়ে যাওয়ার জন্য বিশেষ সফটওয়্যার ব্যবহার করে দেখতে পারেন। তবে একদম শুরুর দিকে বাড়তি খরচ এড়িয়ে এক্সেলে হিসাব রাখতে পারেন।

মার্কেটিং – সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় আপনার “ ক্লাউড কিচেন” এর জন্য। অবশ্যই আপানর ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম এবং ইউটিউব এ অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে যার মাধ্যমে আপনার কিচেন এর প্রচারনা করতে পারেন। এসব মাধ্যমে নিয়মিত আপানাকে পোস্ট অথবা ভিডিও আপলোড করতে হবে। পেইড মার্কেটিং এর জন্য একটি বাজেট আপনাকে বরাদ্দ রাখতে হবে। কেননা বর্তমান সময় সব মাধ্যমে অরগানিক রিচ একদম কমে গিয়েছে। এছাড়াও যত বেশি সংখ্যক ফুড ডেলিভারি অ্যাপের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারেন তাতে অনলাইনে আপনার উপস্থিতি বাড়বে।

আশা করি যাদের “ ক্লাউড কিচেন” নিইয়ে কাজ করার ইচ্ছে আছে তাদের এই লিখাটি কাজে দিবে। ধন্যবাদ সবাইকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *